হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী এর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না আর সঠিক তথ্য পেতে এবং এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেখতে আরো হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে নিচের আর্টিকেলগুলি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করি এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু বুঝতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
- হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
- হযরত ওমর রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা
- হযরত ওমর রাঃ এর জীবনী রচনা
- হযরত ওমর রাঃ এর হত্যাকারীর নাম কি
- হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল
- হযরত ওমর রাঃ এর ঘটনা
- লেখক এর মতামত
হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং ইসলামের ইতিহাসে এক মহৎ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রাথমিক জীবনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
জন্ম ও বংশপরিচয় পূর্ণ নাম: উমর ইবনুল খাত্তাব ইবনু নুফায়েল ইবনু আব্দুল উয্যা কুনিয়াত: আবু হাফস উপাধি: আল-ফারুক (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) জন্ম: খ্রিস্টাব্দ প্রায় ৫৮৪ সালে, মক্কায় (নবী করিম ﷺ-এর জন্মের প্রায় ১৩ বছর পর) বংশ: কুরাইশ গোত্রের বানু আদি শাখা পিতা: খাত্তাব ইবনু নুফায়েল মাতা: হাতমা বিনতে হাশিম
প্রাক-ইসলামী জীবন উমর (রাঃ) শৈশব থেকেই মক্কার সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও প্রভাবশালী যুবকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত লম্বা, সবল দেহের অধিকারী এবং বীরত্বপূর্ণ চেহারার মানুষ। যুবক বয়সে তিনি উট চরাতেন, বংশীয় প্রতিনিধি হিসেবে দূতাবাসের কাজ করতেন এবং কবিতায় পারদর্শী ছিলেন। পড়া-লেখা জানতেন — যা সে যুগে খুবই বিরল ছিল। মক্কার সমাজে কুস্তি ও ঘোড়দৌড়ে তাঁর খ্যাতি ছিল।
ইসলামের শত্রুতা ও ইসলাম গ্রহণ প্রথমদিকে তিনি ইসলামের তীব্র বিরোধী ছিলেন এবং মুসলমানদের কষ্ট দিতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন, কিন্তু পথে নিজের বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (রাঃ) ও দুলাভাই সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের খবর পান। তাদের কাছ থেকে সূরা ত্বা-হা-এর আয়াত শুনে হৃদয় গলে যায়। সোজা নবীজির কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন (খ্রিস্টাব্দ ৬১৬ সালে, নবুওয়তের ৬ষ্ঠ বছরে)।
ইসলাম গ্রহণের প্রভাব উমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে একটি বড় মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। তিনি খোলাখুলি ইসলাম ঘোষণা করেন এবং প্রথমবারের মতো মুসলমানরা প্রকাশ্যে কাবা শরীফে গিয়ে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হয়। এ জন্যই তিনি আল-ফারুক উপাধি লাভ করেন— যিনি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য করেন।
হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাসন ব্যবস্থা ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত — ন্যায়বিচার, প্রশাসনিক দক্ষতা ও জনকল্যাণে ভরপুর। তাঁর খিলাফতকাল ছিল ৬৩৪–৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ, মোট প্রায় ১০ বছর ৬ মাস। শাসন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য
শক্তিশালী প্রশাসন ইসলামি সাম্রাজ্যকে প্রদেশ (ওয়ালায়াত) ভাগ করে প্রতিটি প্রদেশে ওয়ালী (গভর্নর) নিয়োগ করতেন। গভর্নরদের কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করতেন; নিয়মিত হিসাব নিতেন। গভর্নরদের সম্পদের হিসাব রাখতেন, যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়।
ন্যায়বিচার ও আদালত ব্যবস্থা স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন — কাজি (বিচারক) নিয়োগ করেন, যারা গভর্নরের প্রভাবমুক্ত থাকতেন। নিজেও সাধারণ মানুষের মামলা শুনতেন। ন্যায়বিচারে মুসলিম-অমুসলিম সবাই সমান অধিকার পেত। হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
জনকল্যাণ বিত্তহীনদের জন্য ভাতা চালু করেন। বিধবা, এতিম, অসহায়দের জন্য বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) থেকে সাহায্য প্রদান করতেন। সরাইখানা, সড়ক, সেতু, কূপ, খাল নির্মাণ করতেন। প্রথমবারের মতো কারাগার ব্যবস্থা চালু করেন।
সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেনাবাহিনীকে প্রদেশভিত্তিক ভাগ করে স্থায়ী সেনা শিবির (আমসার) তৈরি করেন — যেমন: কুফা, বসরা, ফুস্তাত। সেনাদের বেতন ও পেনশন ব্যবস্থা চালু করেন। সীমান্ত রক্ষা ও জিহাদের জন্য সংগঠিত সামরিক পরিকল্পনা করতেন।
অর্থনীতি ও রাজস্ব খরাজ (ভূমি কর) ও জিজিয়া (অমুসলিমদের নিরাপত্তা কর) প্রবর্তন করেন। কৃষি উন্নয়নের জন্য সেচ ও চাষাবাদে উৎসাহ দেন। ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণ চালু করেন। প্রশাসনিক নতুনত্ব হিজরি সন প্রবর্তন করেন। ডাক বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগ চালু করেন। বাজার তদারকির জন্য মুহতাসিব নিয়োগ করেন, যেন দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ হয়।
ধর্মীয় স্বাধীনতা বিজিত অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেন। তাদের উপাসনালয় রক্ষা করতেন, জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ করাতেন না। তাঁর শাসনের ফলাফল সাম্রাজ্যের সীমানা পারস্য, সিরিয়া, মিসর, ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা, শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করত। তাঁর ন্যায়নীতি ইতিহাসে “সুবর্ণ যুগ” নামে খ্যাত।
হযরত ওমর রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা
হযরত ওমর রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও স্মরণীয়। তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
শহীদ হওয়ার পটভূমি খ্রিস্টাব্দ ৬৪৪ সালের শেষ দিকে (হিজরি ২৩ সনের জিলহজ মাসে) এক পারস্য বংশোদ্ভূত দাস আবু লুলু ফিরুজ তাঁকে হত্যা করে।আবু লুলু ছিল এক কারিগর, কুফার গভর্নর মুগিরা ইবনু শু’বা (রাঃ)-এর দাস। কোনো এক বিরোধের কারণে বা ব্যক্তিগত ক্ষোভে, সে হযরত উমর (রাঃ)-কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
হত্যার ঘটনা ফজরের নামাজের সময় আক্রমণএক সকালে (২৬ জিলহজ, হিজরি ২৩) মদিনার মসজিদে নববীতে হযরত উমর (রাঃ) ইমামতি করছিলেন। প্রথম তাকবীরের পরই আবু লুলু লুকিয়ে থাকা দুই ধারালো ধারবিশিষ্ট ছুরি দিয়ে হযরত উমর (রাঃ)-কে একাধিকবার আঘাত করে। আঘাত এত গভীর ছিল যে পেট ফেটে অন্ত্র বের হয়ে আসে।
অন্যান্য মুসল্লিদের আক্রমণ ছুরি হাতে আবু লুলু পালানোর সময় আরও কয়েকজন সাহাবীকে আঘাত করে শহীদ করে। শেষমেষ জনতার হাতে ধরা পড়ার আগেই সে নিজেই আত্মহত্যা করে। শেষ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় হযরত উমর (রাঃ) নামাজ শেষ করার জন্য হজরত আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)-কে ইমামত করতে বলেন।
তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তিনটি বড় কাজ করেন— খিলাফতের জন্য শূরা কমিটি গঠন করেন (যার মাধ্যমে উসমান ইবনু আফফান রাঃ খলিফা নির্বাচিত হন)। কারো প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ না নেওয়ার নির্দেশ দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও আবু বকর (রাঃ)-এর পাশে কবর দেওয়ার অনুমতি চান, যা নবীজির স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) দেন।
ইন্তেকাল ও দাফন ৩ দিন পর, ১লা মহররম, হিজরি ২৪ সালে (খ্রিস্টাব্দ ৬৪৪), ৬৩ বছর বয়সে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পাশেই আবু বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে দাফন করা হয়। হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
শিক্ষা ও তাৎপর্য তাঁর শাহাদাত মুসলিম উম্মাহর জন্য ছিল বিশাল ক্ষতি। তাঁর ন্যায়নীতি, প্রশাসনিক দক্ষতা ও সাহস ইতিহাসে সুবর্ণ যুগ নামে খ্যাত। আজও ন্যায়পরায়ণ শাসকের উদাহরণ দিতে গেলে “উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু” নাম প্রথমে আসে।
হযরত ওমর রাঃ এর জীবনী রচনা
হযরত ওমর রাঃ এর জীবনী রচনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর জীবনী ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতীক। তাঁর জীবনসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো—
জন্ম ও বংশপরিচয় পূর্ণ নাম: উমর ইবনুল খাত্তাব ইবনু নুফায়েল ইবনু আব্দুল উয্যা
- কুনিয়াত: আবু হাফস
- উপাধি: আল-ফারুক (সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী)
- জন্ম: আনুমানিক খ্রিস্টাব্দ ৫৮৪ সালে, মক্কা নগরে।
- বংশ: কুরাইশ গোত্রের বানু আদি শাখা।
- পিতা: খাত্তাব ইবনু নুফায়েল।
- মাতা: হাতমা বিনতে হাশিম।
প্রাক-ইসলামী জীবন হযরত উমর (রাঃ) যুবক বয়সে সাহস, শক্তি ও বাগ্মিতার জন্য মক্কায় সুপরিচিত ছিলেন। তিনি পড়তে-লিখতে পারতেন — যা সে যুগে বিরল ছিল। কুস্তি, ঘোড়দৌড় এবং কাব্যচর্চায় পারদর্শী ছিলেন। মক্কার প্রতিনিধি হয়ে দূতাবাসের কাজ করতেন এবং বংশীয় বিরোধে বিচারকের ভূমিকাও পালন করতেন।
ইসলাম গ্রহণ প্রথমে তিনি ইসলামের তীব্র বিরোধী ছিলেন। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। পথে জানতে পারেন তাঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (রাঃ) ও দুলাভাই সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাদের কাছে গিয়ে সূরা ত্বা-হা-এর আয়াত শোনার পর তাঁর হৃদয় নরম হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ নবীজির কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন (হিজরতের ৬ বছর আগে) তাঁর ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলমানরা প্রকাশ্যে কাবা শরীফে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন।
খিলাফতকাল হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর হিজরি ১৩ সালে উমর (রাঃ) খলিফা নিযুক্ত হন। তাঁর শাসনকাল ছিল প্রায় ১০ বছর ৬ মাস (৬৩৪–৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ)। শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য প্রদেশভিত্তিক প্রশাসন ও গভর্নর নিয়োগ স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ ও কাজি নিয়োগ জনকল্যাণমূলক কাজ — সড়ক, সেতু, কূপ, সরাইখানা নির্মাণ
সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করা, বেতন ও পেনশন চালু হিজরি সনের প্রবর্তন করব্যবস্থা ও বায়তুল মাল পরিচালনা অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ তাঁর শাসনকালে ইসলামি সাম্রাজ্যের সীমানা সিরিয়া, মিসর, ইরাক ও পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
মৃত্যু ও শাহাদাত হিজরি ২৩ সালের ২৬ জিলহজ ফজরের নামাজে মসজিদে নববীতে এক পারস্য দাস আবু লুলু ফিরুজ তাঁর উপর ছুরি চালায়। তিন দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পর হিজরি ২৪ সালের ১ মহররম তিনি শাহাদাতবরণ করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও আবু বকর (রাঃ)-এর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
গুণাবলি ও অবদান ন্যায়বিচার ও সত্যবাদিতায় অতুলনীয় মুসলমানদের জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা সাহস, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় বিশ্ব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
হযরত ওমর রাঃ এর হত্যাকারীর নাম কি
হযরত ওমর রাঃ এর হত্যাকারীর নাম কি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর হত্যাকারীর নাম ছিল আবূ লুলু’আ ফিরুজ (أبو لؤلؤة فيروز)। সংক্ষিপ্ত পরিচয়: তিনি একজন মজুসি (অগ্নিপূজক) পারসিক দাস ছিলেন। মূল নাম: ফিরুজ। মালিক ছিলেন মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) নামের এক সাহাবী। কাফির অবস্থায় বন্দি হয়ে মদিনায় আসেন।
হত্যার ঘটনা: ২৩ হিজরির (৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) জিলহজ্জ মাসে ফজরের নামাজের সময়, আবূ লুলু’আ হযরত উমর (রাঃ)-এর পেছনে দাঁড়িয়ে দুই ধার বিশিষ্ট ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে। তিনি একাধিকবার ছুরিকাঘাত করেন, যার মধ্যে একটি আঘাত গভীরভাবে পেটে লাগে। হযরত উমর (রাঃ) গুরুতর আহত হয়ে তিন দিন পর ইন্তিকাল করেন।
হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল
হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর বিচার ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ন্যায়ভিত্তিক, স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সবার জন্য সমান। তাঁর বিচার ব্যবস্থাকে ইতিহাসে ইসলামী ন্যায়বিচারের সোনালী যুগ বলা হয়। নিচে তাঁর বিচার ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ধাপে ধাপে তুলে ধরছি—
সবার জন্য সমান আইন মুসলিম, অমুসলিম, ধনী, গরিব, শাসক বা সাধারণ—আইনের চোখে সবাই সমান ছিলেন। নিজে খলিফা হওয়া সত্ত্বেও আদালতে সাধারণ মানুষের সাথে সমান আসনে বসে বিচার দিতেন। একাধিকবার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি আদালতে হাজির হয়ে নিজের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
স্বাধীন বিচার বিভাগ বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করেন। প্রতিটি অঞ্চলে কাজী (বিচারক) নিয়োগ দেন, যাদের কাজ ছিল কেবল বিচার করা—প্রশাসনিক বা সামরিক কাজে যুক্ত করা হতো না। বিচারক নিয়োগের আগে তাদের ঈমান, ন্যায়পরায়ণতা ও আইনজ্ঞতার পরীক্ষা নিতেন।
প্রমাণভিত্তিক বিচার কোনো রায় দেওয়ার আগে সাক্ষ্য, প্রমাণ ও ন্যায়নিষ্ঠ যাচাই করতেন। শুধুমাত্র গুজব বা ধারণার ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন না। সাক্ষ্যদাতার সততা যাচাই করতেন, এমনকি মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে শাস্তি দিতেন। হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
দ্রুত বিচার মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত করার চেষ্টা করতেন, যাতে ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়ে ক্ষতি না হয়। দীর্ঘসূত্রতা ও জটিল প্রক্রিয়া এড়িয়ে সহজ ভাষায় আইন প্রয়োগ করতেন।
বিচারকের জবাবদিহিতা সময়ে সময়ে বিচারকদের কাজ পর্যালোচনা করতেন। যদি কোনো বিচারক পক্ষপাতদুষ্ট বা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণিত হতো, তবে সাথে সাথে তাকে বরখাস্ত করতেন। এমনকি তাঁর নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নরদেরও আদালতে তলব করা হতো।
শাসকেরও বিচারাধীন থাকা শাসক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যদি অন্যায় করতেন, তাদেরও সাধারণ নাগরিকের মতো শাস্তি দিতেন। একবার একজন গভর্নর একজন সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে চাবুক মারলে, হযরত ওমর (রাঃ) সেই গভর্নরকেই একইভাবে শাস্তি দেন।
মানবিক ও নৈতিক দিক শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ছিল সংশোধন, প্রতিশোধ নয়। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতেন। দরিদ্র বা অসহায় হলে জরিমানা মওকুফ বা হ্রাস করতেন।
অমুসলিমদের বিচার অমুসলিমরা চাইলে নিজেদের ধর্মীয় আইন অনুযায়ী বিচার নিতে পারত। মুসলিম আদালতে এলে তাদের সাথেও সমান ন্যায়বিচার করা হতো।
সংক্ষেপে: হযরত ওমর (রাঃ)-এর বিচার ব্যবস্থা ছিল— “ন্যায়ের শাসন, প্রমাণের ভিত্তি, শাসকের জবাবদিহিতা ও মানবিকতার এক বিরল সমন্বয়।” এ কারণে তাঁকে আজও ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে স্মরণ করা হয়।
হযরত ওমর রাঃ এর ঘটনা
হযরত ওমর রাঃ এর ঘটনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবনের অনেক ঘটনা মুসলমানদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরছি:
ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার ঘটনা হযরত উমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলেন ইসলামের কঠোর শত্রু। একদিন তিনি রাগের বশে নবী করিম ﷺ-কে হত্যার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে এক ব্যক্তি তাঁকে জানালেন, তাঁর বোন ও দুলাভাই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। রাগে তিনি বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখলেন।
তারা কুরআন তিলাওয়াত করছেন। বোনের উপর হাত তোলার পর তিনি অনুতপ্ত হয়ে কুরআনের আয়াত পড়লেন, আর তখনই তাঁর অন্তর নরম হয়ে যায়। এরপর তিনি রাসূল ﷺ-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণে মুসলমানরা অনেক শক্তি পেলেন।
খলিফা হিসেবে ন্যায়বিচার খলিফা হওয়ার পর তিনি ন্যায়বিচারে অতুলনীয় হয়ে উঠেছিলেন। হযরত উমর (রাঃ) সর্বদা বলতেন: যদি দাজলায় (ইরাকে) কোনো গাধাও ক্ষুধায় মারা যায়, তবে আমি ভয় করি আল্লাহ আমাকে এর হিসাব চাইবেন। তিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন, রাতের বেলা গোপনে মানুষের খোঁজখবর নিতেন।
ইসলামের বিস্তার তাঁর শাসনামলে ইসলামের সীমানা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। পারস্য সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্যের বিশাল অংশ মুসলমানদের অধীনে আসে। মিসর, ইরাক, সিরিয়া, জেরুজালেমসহ বহু অঞ্চল ইসলামী খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী
প্রশাসনিক সংস্কার
- তিনি বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন।
- বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
- সেনাবাহিনীকে বেতনভিত্তিক করেন।
- হিজরী সন চালু করেন।
শাহাদাতের ঘটনা একজন মজদুর আবু লুলু ফারসি নামক এক অমুসলিম তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। একদিন ফজরের নামাজে ইমামতি করার সময় উমর (রাঃ)-কে সে ছুরিকাঘাত করে। কয়েক দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি শাহাদাত লাভ করেন (২৩ হিজরী, ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে)। তাঁর পুরো জীবন ইসলামের জন্য ত্যাগ, ন্যায়, সাহস এবং দাওয়াতের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল আপনাদের সাথে আলোচনা মুখ্য বিষয় ছিল হযরত ওমর রাঃ এর প্রাথমিক জীবনী সাথে আরো আলোচনা করেছি হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল পরিপূর্ণ বিবরণ সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লেগেছে।
আজকের আর্টিকেলটি পরে আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন, এবং কোন কোন বিষয়গুলি আপনার ভালো লেগেছে আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষানীয় আর্টিকেল প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন, আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রোকন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url