হার্নিয়া রোগ কেন হয় হার্নিয়া রোগের ঔষধ
হার্নিয়া রোগ কেন হয় এর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না আর সঠিক তথ্য পেতে এবং এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেখতে আরো হার্নিয়া রোগের ঔষধ এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
হার্নিয়া রোগ কেন হয় হার্নিয়া রোগের ঔষধ এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে নিচের আর্টিকেলগুলি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করি এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু বুঝতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র
- হার্নিয়া রোগ কেন হয়
- পুরুষের হার্নিয়া রোগ কেন হয়
- হার্নিয়া রোগের ঔষধ
- অন্ডকোষে হার্নিয়ার লক্ষণ
- হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় হোমিওপ্যাথি
- অপারেশন ছাড়া হার্নিয়া চিকিৎসা
- হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায়
- সিজারের পর হার্নিয়া কেন হয়
- হার্নিয়া রোগের লক্ষণ কি
- মেয়েদের হার্নিয়া কেন হয়
- লেখক এর মতামত
হার্নিয়া রোগ কেন হয়
- জন্মগতভাবে বা বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশির গঠন দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
- অপারেশনের পর পেটের দেয়াল দুর্বল হলে হার্নিয়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত ভার তোলা বা ধাক্কাধাক্কি করলে পেটের চাপ বেড়ে যায়, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- দীর্ঘদিনের কাশি (যেমন ফুসফুসের অসুখ বা ধূমপানজনিত কাশি) পেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
- দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মল ত্যাগের সময় পেটের ওপর চাপ পড়ে, যা হার্নিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- প্রস্রাবের সময় অতিরিক্ত চাপ দিলে ইনগুইনাল হার্নিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- অতিরিক্ত ওজন পেটের পেশির ওপর চাপে ফেলে দেয়, ফলে পেশি দুর্বল হয়ে হার্নিয়া দেখা দিতে পারে।
সাধারণত যে ধরনের হার্নিয়া দেখা যায়:
প্রতিকার বা চিকিৎসা: প্রাথমিক পর্যায়ে হার্নিয়া খুব ব্যথাহীন ও ছোট হতে পারে, তবে সময়মতো চিকিৎসা না করলে বিপজ্জনক হতে পারে। একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা সার্জারি (হার্নিয়া রিপেয়ার), বিশেষ করে যদি অঙ্গ আটকে যায় বা রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুরুষের হার্নিয়া রোগ কেন হয়
পুরুষের হার্নিয়া রোগ কেন হয় পুরুষের হার্নিয়া রোগ বেশ কিছু কারণে হতে পারে। হার্নিয়া মূলত তখনই হয় যখন শরীরের অভ্যন্তরের কোনো অঙ্গ বা টিস্যু (সাধারণত অন্ত্র) দুর্বল বা ফাঁকা জায়গা দিয়ে চামড়ার নিচে বেরিয়ে আসে। নিচে পুরুষদের হার্নিয়া হওয়ার প্রধান কারণগুলো দেওয়া হলো:
পুরুষদের হার্নিয়া হওয়ার সাধারণ কারণ:
১. জন্মগত পেশির দুর্বলতা অনেক পুরুষের পেটের নিচের দেয়ালে জন্ম থেকেই দুর্বলতা থাকতে পারে, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
২. ভারী জিনিস ওঠানো অতিরিক্ত ভার উত্তোলন করলে পেটের পেশির ওপর চাপ পড়ে, ফলে ফাঁক সৃষ্টি হয়ে হার্নিয়া হতে পারে।
৩. দীর্ঘ সময় ধরে কাশি বা কনস্টিপেশন দীর্ঘমেয়াদী কাশি বা কোষ্ঠকাঠিন্য পেটে চাপ সৃষ্টি করে এবং এই চাপের কারণে পেশি দুর্বল হয়ে হার্নিয়া হতে পারে।
৪. স্থূলতা (মোটापा) অতিরিক্ত ওজন পেটের দেয়ালের উপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে, ফলে পেশি আলগা হয়ে যায় এবং হার্নিয়া দেখা দেয়।
৫. বার্ধক্যজনিত পেশির দুর্বলতা বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেটের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়, তখন সহজেই হার্নিয়া হতে পারে।
৬. মূত্রনালী বা প্রস্রাবজনিত সমস্যা প্রস্রাব করতে দীর্ঘসময় চাপ দিতে হয় এমন রোগ (যেমন প্রোস্টেট সমস্যা) থাকলে হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
সবচেয়ে সাধারণ পুরুষের হার্নিয়ার ধরন: ইনগুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia): এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পুরুষদের মধ্যে। পেটের ভেতরের কিছু অংশ (সাধারণত অন্ত্র) কুঁচকির (groin) ফাঁকা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
প্রতিকার ও চিকিৎসা: সার্জারি (হার্নিয়া ঠিক করার একমাত্র স্থায়ী উপায়) ভারী জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকা ওজন কমানো ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস পেটের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী) আপনার যদি সন্দেহ হয় যে হার্নিয়া হয়েছে, তাহলে দ্রুত একজন সার্জারি বিশেষজ্ঞ বা জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে যান। যত দ্রুত ধরা পড়ে, তত সহজে এবং কম জটিলতায় চিকিৎসা সম্ভব।
হার্নিয়া রোগের ঔষধ
হার্নিয়া রোগের ঔষধ হার্নিয়া (Hernia) রোগের স্থায়ী চিকিৎসা মূলত সার্জারি, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপশম বা লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ব্যবহার করা যায়। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে কোনো ওষুধেই হার্নিয়া সম্পূর্ণ ভালো হয় না — ওষুধ শুধু সাময়িক আরাম দিতে পারে।
হার্নিয়ার সাধারণ লক্ষণ উপশমে ব্যবহৃত ওষুধসমূহ:
ব্যথানাশক ওষুধ (Painkillers): Paracetamol – হালকা ব্যথার জন্য, Ibuprofen – ব্যথা ও ফোলা কমায় Ketorolac / Diclofenac – তীব্র ব্যথার জন্য (ডাক্তারের পরামর্শে)
অম্বল বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ (Acidity Reducers): হার্নিয়ার সঙ্গে অনেক সময় অম্বল, বুক জ্বালা বা গ্যাসের সমস্যা থাকে, বিশেষ করে হাইয়েটাল হার্নিয়াতে। Omeprazole / Esomeprazole (Nexium) – প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (PPI), অ্যাসিড কমায় Ranitidine / Famotidine – H2 ব্লকার Antacid Syrup (Gaviscon / Digene) – এসিড নিরসনে সাময়িক আরাম দেয়
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ওষুধ: যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তারা হার্নিয়ার ঝুঁকিতে বেশি। তাই নিয়মিত পায়খানা হওয়ার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। Lactulose syrup, Isabgul (Psyllium husk) – প্রাকৃতিক ফাইবার
সতর্কতা: এই সব ওষুধ শুধু উপসর্গের উপশমে ব্যবহৃত হয়। যদি হার্নিয়া বড় হয়ে যায় বা ব্যথা বাড়ে, তখন জটিলতা (strangulation বা obstruction) দেখা দিতে পারে, যা জরুরি অপারেশন ছাড়া ঠিক হয় না। স্থায়ী চিকিৎসা: হার্নিয়া সারানোর একমাত্র স্থায়ী পদ্ধতি: সার্জারি (Hernia Repair Surgery) Open surgery Laparoscopic surgery (keyhole surgery)
চিকিৎসকের পরামর্শ কবে প্রয়োজন? কুঁচকি বা পেটে চাকা বা ফোলাভাব চাকা ব্যথা করলে বা ছোট-বড় হলে বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা প্রস্রাবে সমস্যা হলে
অন্ডকোষে হার্নিয়ার লক্ষণ
অন্ডকোষে হার্নিয়ার লক্ষণ অন্ডকোষে হার্নিয়া মূলত ইনগুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia) এর একটি রূপ, যেখানে পেটের অভ্যন্তরের অংশ (সাধারণত অন্ত্র) কুঁচকি বা অন্ডকোষের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এটি পুরুষদের মধ্যে খুব সাধারণ একটি সমস্যা।
অন্ডকোষে হার্নিয়ার লক্ষণসমূহ:
- অন্ডকোষে ফোলা বা গাঁটের মতো কিছু অনুভব হওয়া বিশেষ করে দাঁড়ালে বা কাশি দিলে ফোলাটা বড় হয় শোয়ালে অনেক সময় ছোট বা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে
- অন্ডকোষে ব্যথা বা অস্বস্তি ব্যথা হালকা থেকে শুরু করে তীব্রও হতে পারে ব্যথা দাঁড়ালে বা ভারী কিছু তুললে বেড়ে যায়
- চলাফেরা বা কাজের সময় টান বা চাপ অনুভব হওয়া নিচের দিকে ভার ভার লাগা বা টান টান অনুভূতি
- অন্ডকোষের এক পাশ বড় বা ভারী লাগা দুটি অন্ডকোষের মাপ আলাদা হয়ে যেতে পারে
- বমি বমি ভাব বা হজমে সমস্যা (জটিল ক্ষেত্রে) যদি হার্নিয়াটি ‘স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড’ (অন্ত্র আটকে রক্ত চলাচল বন্ধ) হয়ে যায়, তখন পেট ব্যথা, বমি ও জ্বর হতে পারে – যা জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
আপনি কিভাবে বুঝবেন এটি হার্নিয়া? শুয়ে গেলে ফোলা কমে গেলে হাত দিয়ে চাপ দিলে ফোলাটা ভিতরে ঢুকে যায় কাশি দিলে বা পেটে চাপ পড়লে আবার ফোলাটা বেরিয়ে আসে
চিকিৎসা: হার্নিয়া নিজে নিজে ভালো হয় না। একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে অপারেশন (hernia repair surgery)। দেরি করলে হার্নিয়া চিপে গিয়ে জটিলতা (স্ট্র্যাঙ্গুলেশন) তৈরি হতে পারে, যা জীবনঘাতীও হতে পারে। কখন জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন? হঠাৎ করে ফোলাটা শক্ত হয়ে গেলো ব্যথা তীব্র হয়ে গেল বমি হচ্ছে ও পেট ফুলে যাচ্ছে এগুলো জরুরি অবস্থা, দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
আপনার যদি কোনো অস্বস্তি বা উপরের লক্ষণ থাকে, তাহলে দয়া করে একজন জেনারেল সার্জন বা ইউরোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে আপনি চাইলে অপারেশনের ধরন ও খরচ সম্পর্কেও জানতে পারেন।
হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় হোমিওপ্যাথি
হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় হোমিওপ্যাথি হার্নিয়া একটি শারীরিক কাঠামোগত সমস্যা, যেখানে শরীরের কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু দুর্বল বা ফাঁকাস্থান দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে। সাধারণত এটি সম্পূর্ণভাবে সারাতে সার্জারি করা হয়। তবে অনেকে প্রাথমিক পর্যায়ে বা অপারেশনের আগে বা পরে স্বস্তির জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: হোমিওপ্যাথি হার্নিয়া সারাতে সাহায্য করতে পারে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু তা কাটা বা ফাটা জায়গা বন্ধ করতে পারে না। স্থায়ী চিকিৎসা হিসেবে হোমিওপ্যাথি কার্যকর নয়, তবে ব্যথা, অস্বস্তি ও হজমের সমস্যায় কিছুটা আরাম দিতে পারে। হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত কিছু সাধারণ ওষুধ (ব্যবহার শুধুমাত্র অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শে):
১. Nux Vomica যারা অতিরিক্ত খাওয়া, ধূমপান, মদ্যপান বা অনিয়মিত জীবনযাপন করেন তাদের ইনগুইনাল হার্নিয়ায় ব্যবহৃত হয়। উপসর্গ: কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে গ্যাস, চাপে অস্বস্তি।
২. Lycopodium হজমের সমস্যা, ডান পাশে হার্নিয়া, গ্যাসে পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদিতে উপকারী।
৩. Calcarea Carbonica যারা স্থূল, ঘামে ভেজা শরীর, দুর্বল পেশি, শিশুদের নাভি ফুলে যায়—তাদের জন্য কার্যকর।
৪. Rhus Toxicodendron যাদের হার্নিয়া থেকে ব্যথা হয়, বিশেষ করে বেশি নড়াচড়ার সময়।
৫. Bellis Perennis শরীরের গভীর টিস্যুর ক্ষত বা আঘাত থেকে আরাম পেতে ব্যবহৃত হয়।
বাড়তি পরামর্শ:
- পেটের চাপে কমে এমন কাপড় পরা
- চিত হয়ে শোয়া অবস্থায় হার্নিয়ার স্থান চাপ দিয়ে রাখা
- হালকা খাবার খাওয়া, গ্যাস কমানো
- ভারী জিনিস তোলা বন্ধ রাখা
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যদি দীর্ঘদিনেও আরাম না দেয়, বা হার্নিয়া ফুলে ওঠে, ব্যথা বাড়ে, বমি হয় বা প্রস্রাব/পায়খানা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তা জরুরি মেডিকেল কেস হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অবিলম্বে অপারেশন করা দরকার।
অপারেশন ছাড়া হার্নিয়া চিকিৎসা
অপারেশন ছাড়া হার্নিয়া চিকিৎসা হার্নিয়া একটি শারীরিক অবস্থা যা সাধারণত অপারেশন ছাড়া স্থায়ীভাবে ভালো হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে (বিশেষ করে হার্নিয়া যদি ছোট, কম জটিল বা সাময়িকভাবে অসুবিধাজনক হয়), তখন কিছু অপারেশন ছাড়া উপশমমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় — যদিও তা স্থায়ী সমাধান নয়।
মনে রাখতে হবে: হার্নিয়া অপারেশন ছাড়া পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়, তবে উপসর্গ কমানো ও নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু উপায় আছে। অপারেশন ছাড়া হার্নিয়ার কিছু বিকল্প ব্যবস্থা:
১. হার্নিয়া বেল্ট বা ট্রাস (Hernia Belt/Truss) এটি এক ধরনের স্পেশাল বেল্ট যা কুঁচকির অংশে চাপ দিয়ে রাখে যাতে হার্নিয়া বেরিয়ে না আসে। অস্থায়ীভাবে আরাম দেয়, তবে সব সময় পরা উচিত নয়, এবং দীর্ঘমেয়াদে এর ব্যবহার পেশি আরও দুর্বল করতে পারে।
২. ভার উত্তোলন এড়ানো যেকোনো ভারী কাজ (যেমন বালতি তোলা, বাজার ব্যাগ বহন করা, ইত্যাদি) হার্নিয়া আরও খারাপ করতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি।
৩. কাশি ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণ করা নিয়মিত পানি পান করুন। আঁশযুক্ত খাবার খান (যেমন শাকসবজি, ফলমূল)। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার করুন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ অতিরিক্ত ওজন হার্নিয়ার ওপর চাপ বাড়ায়। ওজন কমালে উপসর্গ অনেকটাই হালকা হয়।
৫. বিশেষ ব্যায়াম (ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে) কিছু হালকা ব্যায়াম পেটের পেশি শক্ত করতে সাহায্য করে। তবে ভুল ব্যায়ামে হার্নিয়া আরও খারাপ হতে পারে, তাই ফিজিওথেরাপিস্ট বা ডাক্তার ছাড়া নিজে থেকে শুরু করবেন না।
যা করা উচিত নয়: হার্নিয়া নিজে নিজে চেপে ভেতরে ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না হার্নিয়াকে অবহেলা করলে তা আঁটকে যেতে পারে (Strangulated Hernia) – যা জরুরি অপারেশনের কারণ হতে পারে
কখন অপারেশন প্রয়োজনীয়:
- হার্নিয়া ব্যথা করে
- বারবার বেরিয়ে আসে
- ফোলা জায়গা শক্ত হয়ে যায় বা রং বদলায়
- বমি, বমি বমি ভাব, বা পেট ফুলে যায়
উপসংহার: অপারেশন ছাড়া হার্নিয়ার উপসর্গ সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এটি একটি গঠনগত সমস্যা, যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান সার্জারি। আপনি যদি এখনই অপারেশন না করাতে চান, তাহলে বেল্ট ব্যবহার, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং নিয়মিত ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ রাখা জরুরি।
হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায়
হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় হার্নিয়া থেকে স্থায়ী মুক্তির একমাত্র কার্যকর উপায় হলো অপারেশন (সার্জারি)। তবে কিছু প্রতিরোধমূলক অভ্যাস ও সহায়ক পদ্ধতি রয়েছে যা ব্যথা কমাতে বা অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে—অপারেশনের আগে কিংবা পরে। হার্নিয়া থেকে মুক্তির কার্যকর উপায়:
সার্জারি (অপারেশন) – একমাত্র স্থায়ী সমাধান হার্নিয়া নিজে নিজে ভালো হয় না। সময়মতো অপারেশন না করলে তা বড় হতে পারে এবং জটিলতা তৈরি করতে পারে (যেমন: ফেঁসে যাওয়া, অন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া)। হার্নিয়া সারানোর দুটি মূল অপারেশন পদ্ধতি: Open Surgery (খোলা পদ্ধতি): চামড়া কেটে হার্নিয়া ঠিক করে সেলাই করে দেওয়া হয়।
Laparoscopic Surgery (লে-পারোস্কোপি): ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরা ও যন্ত্র দিয়ে হার্নিয়া সারানো হয় (কম ব্যথা, দ্রুত সেরে ওঠা)। আজকাল অনেকেই ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে দ্রুত সুস্থ হয়ে কাজে ফিরছেন। অপারেশনের আগে কিছু সহায়ক উপায় (সমস্যা সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে):
- ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলা – পেটের চাপ বাড়ে → হার্নিয়া বাড়ে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও কাশি নিয়ন্ত্রণ – প্রচুর পানি পান করুন, আঁশযুক্ত খাবার খান, প্রয়োজনে ডাক্তারি ওষুধ নিন।
- ওজন কমানো – মোটা হলে পেটের ওপর চাপ পড়ে → হার্নিয়া আরও বাড়ে।
- হার্নিয়া বেল্ট (Hernia Belt) – সাময়িকভাবে ইনগুইনাল হার্নিয়াতে সহায়তা করে। তবে এটি চিকিৎসা নয়, শুধু উপসর্গ সাময়িকভাবে কমায়।
কী করলে হার্নিয়া আরও খারাপ হতে পারে: বিপজ্জনক অভ্যাস ফলাফল অতিরিক্ত চাপ দিয়ে প্রস্রাব/পায়খানা করা পেশি আরও দুর্বল দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ ফোলা আরও বাড়ে সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া জরুরি অবস্থা (Strangulated Hernia)
উপসংহার: হার্নিয়া থেকে মুক্তির স্থায়ী উপায় হলো অপারেশন। আপনি যদি সন্দেহ করেন বা হার্নিয়া ধরা পড়ে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব একজন সার্জন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যত আগে অপারেশন করবেন, তত দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন।
সিজারের পর হার্নিয়া কেন হয়
সিজারের পর হার্নিয়া কেন হয় সিজারিয়ান অপারেশনের (C-section) পর হার্নিয়া হওয়া একেবারে অসম্ভব নয় — বরং এটি একটি পরিচিত জটিলতা। এটি সাধারণত ইনসিশনাল হার্নিয়া (Incisional Hernia) নামে পরিচিত, যার মানে হলো অস্ত্রোপচারের কাটা স্থানের (সিজারের জায়গা) পেশি বা টিস্যু দুর্বল হয়ে যাওয়ায় হার্নিয়া সৃষ্টি হওয়া। সিজারের পর হার্নিয়া কেন হয়?
১. অস্ত্রোপচারের স্থানে পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া সিজারের সময় পেটের দেয়ালে কাটা লাগে। এই কাটার জায়গা পরে সেরে উঠলেও কিছু ক্ষেত্রে পেশি বা টিস্যু সম্পূর্ণ শক্তভাবে জোড়া না লাগলে সেই জায়গা দিয়ে অন্ত্র বা চর্বি বেরিয়ে আসে।
২. সংক্রমণ (ইনফেকশন) সিজারের পর ইনফেকশন হলে পেশি দুর্বল হতে পারে, যা ইনসিশনাল হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. বারবার সিজার (Multiple C-sections) যারা একাধিকবার সিজারিয়ান করিয়েছেন, তাদের পেটের পেশি প্রতিবার কাটা পড়ে দুর্বল হয়, ফলে হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. ভারি কাজ বা চাপ সিজারের পর পরই যদি রোগী ভারি কিছু তোলেন বা পেটে অতিরিক্ত চাপ পড়ে (যেমন কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্র আটকে রাখা), তাহলে ইনসিশনের জায়গা নরম থেকে যায় এবং হার্নিয়া হতে পারে।
৫. পূর্ববর্তী হার্নিয়ার ইতিহাস যাদের আগে থেকে হার্নিয়া ছিল বা পেটের দেয়াল দুর্বল ছিল, তাদের ক্ষেত্রে সিজার পরবর্তী হার্নিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
সিজারের পর হার্নিয়ার লক্ষণ: সিজার কাটা জায়গার কাছাকাছি ফুলে যাওয়া বা মাংসপিণ্ডের মতো বের হয়ে আসা নড়াচড়ায় বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা হাঁচি দিলে ওই জায়গায় চাপ বা অস্বস্তি বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হলে তা আরও খারাপ হতে পারে
প্রতিরোধ ও করণীয়: করণীয় ব্যাখ্যা
- বিশ্রাম সিজারের পর অন্তত ৬-৮ সপ্তাহ ভারী কাজ থেকে বিরত থাকুন
- চিকিৎসকের পরামর্শ ইনফেকশন বা যেকোনো অস্বাভাবিকতা হলে দ্রুত দেখান
- কোমরের বেল্ট অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শে পেট বা কোমরের সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার করা হয়
- পুষ্টিকর খাবার যাতে পেশি দ্রুত ভালো হয়
- কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা প্রচুর পানি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
চিকিৎসা: যদি হার্নিয়া হয়ে যায়, তবে সাধারণত অস্ত্রোপচার করেই তা ঠিক করতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দেরি করা উচিত নয়, কারণ হার্নিয়া বড় হলে তা জটিল হয়ে যেতে পারে।
হার্নিয়া রোগের লক্ষণ কি
হার্নিয়া রোগের লক্ষণ কি হার্নিয়া রোগের লক্ষণ নির্ভর করে এটি শরীরের কোন অংশে হয়েছে, তবে সাধারণভাবে কিছু সাধারণ লক্ষণ সব ধরনের হার্নিয়ার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। হার্নিয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহ:
১. স্ফীত বা ফোলা অংশ (চাকা বা গাঁট)
- কুঁচকি (groin), পেট বা নাভির আশেপাশে চাকা বা গাঁট দেখা যায়।
- দাঁড়ালে বা কাশলে গাঁটটি স্পষ্ট হয়, শুয়ে পড়লে হালকা হয়ে যেতে পারে।
২. ব্যথা বা অস্বস্তি
- ফোলার স্থানে চাপ বা টান টান অনুভব হয়।
- ভারি জিনিস তোলার সময় বা বেশি হাঁটাচলা করলে ব্যথা বাড়তে পারে।
৩. জ্বালাপোড়া বা টান টান অনুভূতি
- কিছু রোগী টান পড়ার মত অনুভব করে ফোলার জায়গায়।
৪. দীর্ঘমেয়াদী কাশি বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে অস্বস্তি
- পেটে চাপ পড়লে ফোলাটা স্পষ্ট হয়।
৫. মুখ বন্ধ থাকা (Strangulated Hernia) – জরুরি লক্ষণ
যদি হার্নিয়ার অংশটি আটকে যায় এবং রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন তা ভয়াবহ হতে পারে। নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা জরুরি:
- হঠাৎ তীব্র ব্যথা
- ফোলা অংশ শক্ত হয়ে যাওয়া ও ব্যথাযুক্ত হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি
- জ্বর
- পায়খানা বা বাতাস বের না হওয়া
পুরুষদের মধ্যে সাধারণত যে হার্নিয়া বেশি হয় – ইনগুইনাল হার্নিয়া – তার বিশেষ লক্ষণ: কুঁচকি বা অন্ডকোষের কাছে ফোলা অংশ দাঁড়ালে ফোলাটা বড় হয় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কাঁদলে বা চাপ দিলে ফোলাটা বাড়ে
- কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
- যদি ফোলা বা চাকা দেখা যায়
- ব্যথা অনুভব হয় বা বাড়ে
- হঠাৎ করে চাকা শক্ত হয়ে যায় বা ব্যথা খুব বেশি হয়
হার্নিয়া শুরুতে সামান্য মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে পারে এবং জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মেয়েদের হার্নিয়া কেন হয়
- গর্ভধারণ, প্রসব এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনের ফলে মেয়েদের পেট ও তলপেটের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এতে হার্নিয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- নিয়মিত বা হঠাৎ অতিরিক্ত ভার উত্তোলনের কারণে পেটের চাপ বেড়ে যায়, যার ফলে পেশি ফেটে গিয়ে হার্নিয়া দেখা দিতে পারে।
- বারবার গর্ভধারণ বা স্বাভাবিক প্রসবের ফলে তলপেটের পেশি আলগা হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে সিজারিয়ান কাটে পরে।
- দীর্ঘ সময় ধরে পেটে চাপ পড়লে পেশির ফাঁক দিয়ে হার্নিয়া দেখা দিতে পারে।
- যেসব নারীর পেটে বা তলপেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে (যেমন সিজারিয়ান, গলব্লাডার অপারেশন), সেখানে কাটের জায়গা দুর্বল হয়ে হার্নিয়া হতে পারে।
মেয়েদের যেসব ধরনের হার্নিয়া বেশি দেখা যায়:
প্রতিরোধ ও পরামর্শ:
- ভারী জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকুন
- হালকা ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন
- সন্দেহ হলে দ্রুত গাইনি বা সার্জারি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
রোকন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url