গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় জেনে রাখুন
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় এর সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না আর সঠিক তথ্য পেতে এবং এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেখতে আরো গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে নিচের আর্টিকেলগুলি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করি এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু বুঝতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
- গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন
- গর্ভাবস্থায় উপরের পেট বড় হওয়ার কারণ
- গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস
- গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার কারণ
- ২ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার ছবি
- বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে
- গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষ
- লেখক এর মতামত
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট বড় হওয়া সাধারণত প্রথম তিন মাসে খুব একটা noticeable হয় না। তবে, সাধারণত গর্ভাবস্থার ৪-৫ মাসের মধ্যে (যথেষ্ট পরিমাণে সময় পেরিয়ে) পেট বড় হতে শুরু করে। এতে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি এবং গর্ভাশয়ের প্রসারণের কারণে পেটের আকার পরিবর্তিত হয়।
সময় অনুসারে পেট বড় হওয়ার ধরন: প্রথম ৩ মাস: প্রথম ত্রৈমাসিকে পেট খুব একটা বড় হতে দেখা যায় না, যদিও ভেতরে শিশুর বিকাশ শুরু হয়ে যায়। ৪-৫ মাস: এই সময় থেকে পেট বড় হতে শুরু করে, তবে প্রত্যেক নারী এবং গর্ভের অবস্থা আলাদা হতে পারে।
৬-৭ মাস: এই সময়ের মধ্যে পেট আরও বড় হয় এবং পেটের আকার চোখে পড়তে শুরু করে। ৮-৯ মাস: গর্ভাবস্থার শেষে, পেট সাধারণত সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে। তবে, এই সময়সীমা সব নারীর জন্য এক রকম নয়। কিছু নারীর পেট দ্রুত বড় হতে পারে, আবার কিছু নারীর পেট একটু দেরি করে বড় হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: ভ্রুণের বৃদ্ধি এবং গর্ভাশয়ের প্রসারণ গর্ভাবস্থায় যেমন শিশুর বৃদ্ধি ঘটে, তেমনি গর্ভাশয়ও বড় হয়। গর্ভাশয় প্রসারিত হওয়ার কারণে পেটের ভেতর চাপ তৈরি হয় এবং কখনো কখনো পেট শক্ত অনুভূত হতে পারে।
ব্রেক্সটন হিক্স সংকোচন (Braxton Hicks Contractions) গর্ভাবস্থায় সাধারণত বিশেষত ২০ সপ্তাহ বা তার পর থেকে "ব্রেক্সটন হিক্স" নামক অসংকোচন শুরু হয়, যা গর্ভের পেশি টান টান হতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ সুস্থ এবং ঝুঁকিমুক্ত একটি প্রক্রিয়া। পেট কিছুটা শক্ত হতে পারে, তবে এটি সাধারণত অস্থায়ী এবং কিছুক্ষণ পরেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
গ্যাস বা পেটের সমস্যার কারণে গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় গ্যাস জমা হতে পারে বা পেট ফেঁপে উঠতে পারে। এতে পেট অনেক সময় শক্ত এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি দিতে পারে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের নানা সমস্যা হতে পারে, যা পেট শক্ত হতে পারে।
গর্ভের সংকোচন বা প্রসবব্যথা (Preterm Labor) যদি গর্ভাবস্থার শেষ দিকের দিকে পেট অনেক সময় ধরে শক্ত থাকে, এবং এর সাথে ব্যথা অনুভূত হয়, তবে এটি এক ধরনের সংকেত হতে পারে যে সময়ের আগে প্রসব হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন।
এছাড়া আরও কিছু কারণ:
- অতিরিক্ত শারীরিক চাপ
- অতিরিক্ত পানি পান করা
- হরমোনাল পরিবর্তন
- অতিরিক্ত শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা
যদি পেটের শক্ত হওয়া নিয়মিত বা ব্যথাযুক্ত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি প্রসবের আগাম সংকেতও হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় উপরের পেট বড় হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় উপরের পেট বড় হওয়ার কারণ গর্ভাবস্থায় উপরের পেট বড় হওয়ার (অথবা উপরের পেট অংশে অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া) বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাশয়ের পরিবর্তন, শিশুর অবস্থান, অথবা শরীরের অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। নিচে কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
গর্ভাশয়ের উপরের অংশের প্রসারণ গর্ভাবস্থায়, গর্ভাশয় প্রথম দিকে ছোট থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকে। প্রথম তিন মাসে গর্ভাশয় গোপন থাকে এবং তা তলপেটের মধ্যে থাকে। তবে, ৪-৫ মাসের দিকে গর্ভাশয়ের উপরের অংশ প্রসারিত হতে শুরু করে এবং পেটের উপরের অংশ ফুলে উঠতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে (৩৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে) হয়ে থাকে।
শিশুর অবস্থান শিশুর অবস্থানও পেটের উপরের অংশের ফুলে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত। গর্ভাবস্থায় যখন শিশুটি উপরের দিকে (উপরের দিকে বা পেটের দিকে) অবস্থান নেয়, তখন গর্ভাশয়ের উপরের অংশ ফুলে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে। বিশেষ করে, যদি শিশুর মাথা বা পা গর্ভাশয়ের উপরের দিকে চলে যায়, তাহলে পেটের উপরের অংশ বড় হতে পারে।
গ্যাস ও পেটের সমস্যা গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে গ্যাস এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীর অনেক বেশি হরমোন উৎপন্ন করে, যা পরিপাকতন্ত্রের গতিপথকে প্রভাবিত করে এবং গ্যাস বা পেট ফেঁপে যাওয়ার সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে পেটের উপরের অংশে ফুলে যাওয়া বা শক্ত হওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
ব্রক্সটন হিক্স সংকোচন (Braxton Hicks Contractions) ব্রক্সটন হিক্স সংকোচন (যা "প্র্যাকটিস কনট্রাকশন" নামেও পরিচিত) গর্ভাবস্থায় সাধারণত ২০ সপ্তাহের পর থেকে শুরু হয়। এতে গর্ভাশয়ের পেশি অস্থায়ীভাবে সংকুচিত হয়, এবং পেটের উপরের অংশে অস্থায়ী শক্ত বা ফুলে যাওয়া অনুভূতি হতে পারে। এটি স্বাভাবিক হলেও অনেক সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ভাবস্থার শেষে পেটের পরিবর্তন গর্ভাবস্থার শেষের দিকে, বিশেষ করে ৭-৯ মাসের মধ্যে, গর্ভাশয়ের অবস্থানও পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি পেটের উপরের অংশে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পেটের উপরের অংশ বড় হতে পারে যদি শিশুর মাথা গর্ভাশয়ের নিচে চলে আসে এবং তলপেটের অংশে চাপ পড়ে।
হরমোনাল পরিবর্তন এবং পানি জমা গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত পানি জমার কারণে পেটের বিভিন্ন অংশে ফুলে যাওয়া হতে পারে। তবে, এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষের দিকে দেখা যায় এবং শারীরিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পেটের উপরের অংশ ফুলে যাওয়া বা বড় হওয়া যদি স্বাভাবিক থেকে ভিন্ন কিছু অনুভূতির সাথে থাকে, যেমন ব্যথা বা অস্বস্তি, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস
গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস গর্ভাবস্থা সাধারণত ৪০ সপ্তাহ (২৮০ দিন) ধরে চলে, যা ৯ মাস এবং কিছুদিন (একটা সাধারণ গর্ভাবস্থার সময়কাল)। তবে, গর্ভাবস্থা গণনা সাধারণত সপ্তাহের হিসেবে করা হয় এবং মাসের হিসেবে এটা কিছুটা আনুমানিক হয়ে থাকে। নিচে গর্ভাবস্থার সপ্তাহ অনুযায়ী কত মাস হয়ে থাকে, তার একটা মোটামুটি তালিকা দেওয়া হলো:
গর্ভাবস্থার সপ্তাহ অনুযায়ী মাস:
- ১-৪ সপ্তাহ: প্রথম মাস (প্রথম ত্রৈমাসিক)
- ৫-৮ সপ্তাহ: দ্বিতীয় মাস (প্রথম ত্রৈমাসিক)
- ৯-১২ সপ্তাহ: তৃতীয় মাস (প্রথম ত্রৈমাসিক)
- ১৩-১৬ সপ্তাহ: চতুর্থ মাস (দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক)
- ১৭-২০ সপ্তাহ: পঞ্চম মাস (দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক)
- ২১-২৪ সপ্তাহ: ষষ্ঠ মাস (দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক)
- ২৫-২৮ সপ্তাহ: সপ্তম মাস (তৃতীয় ত্রৈমাসিক)
- ২৯-৩২ সপ্তাহ: অষ্টম মাস (তৃতীয় ত্রৈমাসিক)
- ৩৩-৩৬ সপ্তাহ: নবম মাস (তৃতীয় ত্রৈমাসিক)
- ৩৭-৪০ সপ্তাহ: শেষ মাস (তৃতীয় ত্রৈমাসিক, জন্মের সময়)
উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট:
- প্রথম ত্রৈমাসিক: ১-১২ সপ্তাহ
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক: ১৩-২৬ সপ্তাহ
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক: ২৭-৪০ সপ্তাহ
গর্ভাবস্থার মাস হিসেবে মোটামুটি ৯ মাস বলা হলেও, সপ্তাহের হিসাবে গর্ভাবস্থা প্রায় ১০ মাস (৪০ সপ্তাহ) দীর্ঘ। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন।
গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার কারণ গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার (অথবা পেটের আকার না বাড়ানোর) পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। তবে, এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার শুরু বা মাঝামাঝি সময়ে দেখা যেতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা সূচকও হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ তুলে ধরা হলো:
প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভাশয় ছোট হওয়া গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভাশয় অনেক ছোট থাকে এবং এটি তলপেটের গভীরে থাকে, তাই পেটের বাইরের অংশ খুব একটা বড় হয় না। এছাড়া এই সময়টি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম মাসগুলোতে হতে পারে, যখন শিশু এখনও খুব ছোট থাকে।
গর্ভের অবস্থান গর্ভাবস্থায় গর্ভের অবস্থান এবং শিশুর অবস্থান পেটের আকারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, গর্ভের নিচের দিকে অবস্থান বা পেছনের দিকে অবস্থান (পোস্টেরিয়র) শিশুর কারণে পেট কম বা ধীর গতিতে বড় হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন।
অতিরিক্ত শারীরিক স্থূলতা বা পেশির টান যেসব মহিলার শরীরের ওজন বা মাংসপেশি বেশি থাকে, তাদের পেট আরও স্থিতিশীল থাকতে পারে, ফলে পেট ততটা বড় দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কিছু মহিলার পেটের পেশি শক্ত এবং টান টান থাকে, যার কারণে পেটের পরিবর্তন খুব ধীরে হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তন শিশুর বৃদ্ধি এবং গর্ভাশয়ের প্রসারণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। কিছু মহিলার হরমোনের কারণে গর্ভাশয় খুব দ্রুত প্রসারিত না হওয়ায় পেটের আকার ততটা বড় হয় না। গর্ভের আকার বা গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি কিছু ক্ষেত্রে, শিশুর আকারের কারণে পেটের আকার ছোট থাকতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি শিশুটি একটু ছোট আকারের হয় বা গর্ভাবস্থার মধ্যে তার বৃদ্ধি ধীরগতিতে ঘটে, তাহলে পেটের আকার বড় হতে দেরি করতে পারে। পানি কম বা গর্ভধারণের সমস্যা কিছু গর্ভাবস্থায়, গর্ভে কম পানি (অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড) থাকতে পারে, যা গর্ভাশয়ের প্রসারণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং এর ফলে পেট খুব বড় হয় না।
এছাড়া, কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন "গর্ভধারণের বিকাশের প্রতিবন্ধকতা" (IUGR – Intrauterine Growth Restriction) পেটের আকারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভের অবস্থান গর্ভের অবস্থানও পেটের আকার নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে। যদি গর্ভাশয়ের অবস্থান সামনে না হয়ে পিছনে থাকে বা শিশুর অবস্থান নিচে থাকে।
তবে পেট উপরের অংশে বেশি বড় হতে পারে এবং নিচের অংশ কম দেখা যেতে পারে। ওজন কম থাকা বা অল্প খাবার খাওয়া যদি গর্ভবতী মায়ের খাবার খাওয়ার পরিমাণ কম থাকে বা স্বাস্থ্যের কারণে ওজন বৃদ্ধি না পায়, তাহলে পেটের আকার ততটা বড় হতে পারে না। এটি কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক বা মাঝামাঝি সময়ে হতে পারে।
তবে সাধারণভাবে গর্ভাবস্থায় খাবারের পরিমাণ বাড়ালে পেটের আকার ঠিকভাবে বেড়ে যাবে। গর্ভাবস্থার শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে পেট ছোট গর্ভাবস্থার শুরুতে এবং মাঝামাঝি সময়ে, বিশেষত ৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে, অনেক নারীর পেট খুব বড় হয় না। কারণ এই সময়ে শিশুর বৃদ্ধি ধীরে চলে এবং গর্ভাশয় পূর্ণভাবে প্রসারিত হয়নি।
যদি পেটের আকার নিয়ে সন্দেহ বা উদ্বেগ থাকে, তবে ডাক্তার বা গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত, যাতে গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
২ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার ছবি
২ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার ছবি ২ মাসের গর্ভাবস্থায় শিশুর আকার খুব ছোট এবং সাধারণত মাত্র ১-২ ইঞ্চি (২-৩ সেন্টিমিটার) লম্বা হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে শিশুটি পোকা বা মাকড়সার আকারের মতো হয় এবং এর শরীরের অংশগুলি ধীরে ধীরে গঠন হতে থাকে। মাথা, হাত, পা এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের
প্রাথমিক গঠন শুরু হয়। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসে শিশুর হার্টবিটও শোনা যেতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রথম ২ মাসে শিশুর অঙ্গগুলির প্রাথমিক গঠন দৃশ্যমান হতে শুরু করে, তবে এখনও অনেকটা অঙ্গনির্মাণের প্রাথমিক স্তরে থাকে। আপনার জন্য যদি এটি কোনো ছবিতে দেখতে চান, আমি একটি ছবি তৈরি করতে পারি যা ২ মাসের গর্ভস্থ শিশুর আকার ও গঠন বোঝাতে সাহায্য করবে।
বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে
বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে গর্ভাবস্থায় শিশুর অবস্থান গর্ভাশয়ের মধ্যে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এটি নির্ভর করে গর্ভাবস্থার সপ্তাহের উপর। তবে, শিশুর অবস্থান সাধারণত কয়েকটি নির্দিষ্ট অবস্থানেই থাকে: প্রথম ত্রৈমাসিক (১-১২ সপ্তাহ): এই সময়ে, শিশুটি খুব ছোট থাকে।
এবং গর্ভাশয়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ঘোরাফেরা করতে পারে। গর্ভাশয় এখনও ছোট এবং শিশুটি অল্প জায়গায় থাকে, তাই নির্দিষ্ট দিক নির্ধারণ করা কঠিন। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৬ সপ্তাহ): শিশু এখানে কিছুটা বড় হয়ে যায় এবং গর্ভাশয়ের ভেতর তার অবস্থান ধীরে ধীরে স্থির হতে শুরু করে। সাধারণত শিশুর মাথা নিচের দিকে।
(পেটের দিকে) চলে আসতে পারে, তবে এটি সবসময়ই এমন হয় না। শিশুর মাথা, পা, হাত, এবং শরীরের অবস্থান অনেক সময় পরিবর্তিত হতে থাকে। এই সময় শিশুর মাথা নিচের দিকে বা পেটের দিকে চলে আসতে পারে, তবে তার পা গর্ভাশয়ের উপরের দিকে বা পেছনের দিকে হতে পারে। তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৪০ সপ্তাহ):
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে (৩৫-৩৬ সপ্তাহের দিকে), শিশুর অবস্থান প্রায় স্থির হয়ে যায়। সাধারণত শিশুর মাথা গর্ভাশয়ের নিচে (পেটের দিকে) চলে আসে, এবং এটি জন্মের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। এই অবস্থানকে "শিরোভঙ্গী" (vertex) বলা হয়, যেখানে শিশুর মাথা পেটের দিকে এবং পা উপরের দিকে বা পাশে থাকে।
শিশুদের অবস্থান পরিবর্তন:
- গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শিশুর অবস্থান বারবার পরিবর্তিত হতে পারে।
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে শিশুর অবস্থান কিছুটা স্থির হতে শুরু করে, কিন্তু গর্ভাবস্থার শেষের দিকে (প্রসবের আগ পর্যন্ত) এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
- যদি শিশুর মাথা পেটের দিকে না আসে এবং পা বা কোমর প্রথমে হয়, তাকে "ব্রীচ পোজিশন" বলা হয়। এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শের মাধ্যমে শিশুর অবস্থান সংশোধন করা হতে পারে।
শিশু পেটের কোন দিকে থাকে? প্রাথমিকভাবে, গর্ভাবস্থায় শিশুর পেটের মধ্যে নির্দিষ্ট দিকের সম্পর্কটি ভিন্ন হতে পারে, তবে ৩৫-৩৬ সপ্তাহের পরে বেশিরভাগ সময়েই শিশুর মাথা নিচের দিকে এবং পা উপরের দিকে থাকে। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন।
গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে কি হয় গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগলে বা চাপ অনুভূত হলে, এটি নানা কারণে হতে পারে এবং কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, কখনো কখনো এটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ লাগার কারণ ও এর প্রভাব বুঝে চলা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু সাধারণ কারণ এবং তাদের প্রভাব আলোচনা করা হলো:
গর্ভাশয়ের প্রসারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভাশয় ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকে, বিশেষ করে ১২-২০ সপ্তাহের মধ্যে। এই সময়ে গর্ভাশয়ের প্রসারণ এবং লিগামেন্টের টান বা মেলাসের কারণে পেটে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত কোনো সমস্যা নয়, তবে যদি চাপ অতিরিক্ত হয়ে ওঠে বা ব্যথা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্র্যাকস্টন হিক্স সংকোচন (Braxton Hicks Contractions) গর্ভাবস্থায় "প্র্যাকটিস কনট্রাকশন" বা ব্র্যাকস্টন হিক্স সংকোচন অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে ২০ সপ্তাহের পর। এই সংকোচনগুলো গর্ভাশয়ের পেশির অস্থায়ী সংকোচন, যা গর্ভের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। এতে পেটে চাপ বা শক্ত হওয়া অনুভূত হতে পারে।
তবে সাধারণত এটি অস্বস্তি সৃষ্টি করলেও ব্যথা তৈরি করে না। গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভাবস্থায় হরমোনের কারণে পরিপাকতন্ত্রের গতিপথে পরিবর্তন আসে, ফলে গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। গ্যাস জমা হওয়া বা পাকস্থলীতে চাপ তৈরি হওয়ার কারণে পেটের বিভিন্ন অংশে চাপ অনুভূত হতে পারে।
অতিরিক্ত শারীরিক চাপ শারীরিকভাবে অনেক সময় এক জায়গায় বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকা, ঝোঁকানো বা অতিরিক্ত কাজ করা গর্ভাবস্থায় পেটে চাপ অনুভূত করতে পারে। বিশেষ করে যদি গর্ভাবস্থার শেষ দিক থাকে, তখন অতিরিক্ত চাপ পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় উঁচু তাপমাত্রা বা দেহের চাপ
গর্ভাবস্থায় তাপমাত্রার পরিবর্তন বা শরীরের অতিরিক্ত গরম হলে গর্ভাশয়ে চাপ পড়তে পারে, যা পেটে অস্বস্তি বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় যেকোনো চাপজনিত সমস্যা গর্ভাবস্থায় যদি অস্বাভাবিক চাপ অনুভূত হয়, যেমন তীব্র ব্যথা, তীব্র চাপ, বা লিকুইড বের হওয়া (যেমন রক্তপাত বা অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড),
তাহলে এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। ব্রীচ পোজিশন বা শিশুর অবস্থান গর্ভাবস্থার মধ্যে কখনো কখনো শিশুর অবস্থান পরিবর্তিত হলে, তা পেটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, যদি শিশুর মাথা গর্ভাশয়ের নিচে না এসে, গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন।
অন্যদিকে থাকে, তখন পেটে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূত হতে পারে। কি করতে হবে? স্বাভাবিক চাপ বা অস্বস্তি: যদি চাপ সামান্য হয় এবং কোনো গুরুতর ব্যথা বা রক্তপাত না থাকে, তবে এটি সাধারণত কোনো সমস্যা নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি চাপ খুব তীব্র হয়, ব্যথার সাথে থাকে, বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে গাইনোকোলজিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষ
গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষ গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামা বা জরায়ুর পতন (cervical insufficiency বা uterine prolapse) একটি গুরুতর পরিস্থিতি হতে পারে এবং এটি বিশেষভাবে গর্ভাবস্থার শেষে (তৃতীয় ত্রৈমাসিক) লক্ষ্য করা যায়। জরায়ু নিচে নেমে আসার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ এবং কারণ রয়েছে, যা যদি দেখা যায়।
তবে তা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। জরায়ু নিচে নামার সাধারণ লক্ষণ: পেটে চাপ অনুভূতি: জরায়ু নিচে নামতে থাকলে পেটের নীচে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূতি হতে পারে। এই চাপ সাধারণত তলপেটের অংশে অনুভূত হয়, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে।
ব্যথা বা অস্বস্তি: জরায়ু নিচে নামার কারণে পিঠে, তলপেটে, বা পায়ের নিচে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বেশি হতে দেখা যায়। ভেজা বা অতিরিক্ত স্রাব: জরায়ু নিচে নেমে আসার কারণে স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বা কিছু সময়ে পানি গড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
যদি অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড (পানির মতো তরল) বের হতে থাকে, তবে এটি প্রসবের শুরু হতে পারে।শিশুর অবস্থান পরিবর্তন: জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণে শিশুর অবস্থানও পরিবর্তিত হতে পারে। শিশুর মাথা গর্ভাশয়ের নিচের দিকে চলে আসতে পারে এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রসবের সংকেত: জরায়ু নিচে নেমে আসার কারণে কিছু সময়ে প্রসবের আগাম সংকেত শুরু হতে পারে। এতে নিয়মিত সংকোচন (contractions) বা প্রসবব্যথা অনুভূত হতে পারে। পায়ে বা তলপেটে চাপের অনুভূতি: জরায়ু নেমে আসার ফলে তলপেটে বা পায়ের অংশে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে পা ফুলে যাওয়ার কারণও হতে পারে।
জরায়ু নিচে নামার কারণ: গর্ভধারণের আগের সমস্যা: যদি পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে গিয়েছিল (যেমন, জরায়ু প্রোল্যাপস), তবে এটি পরবর্তী গর্ভাবস্থায় পুনরায় ঘটতে পারে। অনেক গর্ভধারণ: যাদের একাধিক গর্ভধারণ হয়েছে, তাদের জরায়ুর কাঠামো বা টান কিছুটা দুর্বল হতে পারে, যার কারণে জরায়ু নিচে নামতে পারে।
সামান্য বা অতিরিক্ত হরমোন পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনও জরায়ু এবং তার সমর্থক পেশীগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা জরায়ু নিচে নামানোর জন্য দায়ী হতে পারে। গর্ভধারণের উচ্চ ঝুঁকি: গর্ভাবস্থার আগে যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা অতিরিক্ত ওজন, তা জরায়ু নেমে আসার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
জরায়ু নিচে নামার ক্ষেত্রে কি করতে হবে? যদি আপনি উপরে উল্লেখিত কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, বিশেষ করে ব্যথা বা প্রচণ্ড চাপ অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত গাইনোকোলজিস্ট বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। জরায়ু নিচে নামলে কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, এবং যদি এটি প্রসবের সংকেত দেয়।
তবে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামা বা এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত গর্ভবতী নারীদের চেকআপ এবং যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল আপনাদের সাথে আলোচনা মুখ্য বিষয় ছিল গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় সাথে আরো আলোচনা করেছি গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন পরিপূর্ণ বিবরণ সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লেগেছে।
আজকের আর্টিকেলটি পরে আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন, এবং কোন কোন বিষয়গুলি আপনার ভালো লেগেছে আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষানীয় আর্টিকেল প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন, আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রোকন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url